অনলাইন ডেস্ক : সব ধরনের পণ্যে অসাধু চক্রের থাবায় ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে লাগামহীন হয়ে উঠেছে বাজার। ওষুধ, চাল, ডাল, তেল, আটা, শাক-সবজি, পেঁয়াজ, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ক্রেতার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
করোনার প্রভাবে অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এ পরিস্থিতিতে পণ্যমূল্য নিু ও সীমিত আয়ের মানুষকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।
স্বল্প আয়ের অনেক মানুষ সবজি কিনতে গিয়ে ফিরে আসছেন। ঢাকার বাজারে নানা ধরনের শাকসবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত। কিন্তু দাম আকাশ ছোঁয়া। পেঁয়াজ ১০০ এবং কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
সরকার মিল পর্যায়ে চালের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বস্তায় (৫০ কেজি) ২০০-২৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে মোটা চালের কেজি সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আর গত বছর এ সময় আলু প্রতিকেজি ২০-২৫ টাকা বিক্রি হলেও এবার তা ৪০-৪৫ টাকা।
এছাড়া মাসের ব্যবধানে লিটারে খোলা ভোজ্যতেলের দাম সর্বোচ্চ ৮-১০ টাকা বেড়েছে। ফলে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯২ টাকায়। পাশাপাশি আদা-রসুনের দামও বাড়তি।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠোর তদারকি ও জবাবদিহিতা না থাকায় বছরজুড়ে পুরনো সিন্ডিকেটের কারসাজি চলছে। এ অবস্থায় বাজারে পণ্য কিনতে এসে ভোক্তারা চোরাবালিতে পড়ছেন।
বিভিন্ন সময়ে সরকারের একাধিক সংস্থা ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের চিহ্নিত করলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। যে কারণে তারা নানা উৎসবসহ মৌসুম ধরে একাধিক পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করেছে।
শুক্রবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্রব্যমূল্য ওঠানামার পেছনে বাজারে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। সরকার সেই চক্র ভাঙতে কাজ করছে।
তিনি সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন। মন্ত্রী বলেন, এখানে উৎপাদনেরও একটা ব্যাপার আছে। পেঁয়াজ যদি আমাদের দেশে ঘাটতি থাকে, সেটা আমরা কাছের দেশ ভারত থেকে আমদানি করি।
আমাদের সরকারের চেষ্টার ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। এখন বর্ষা, এ সময়ে একটু দ্রব্যমূল্য বাড়ে, আবার এগুলো ঠিক হয়ে আসে।
জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব। তিনি বলেন, বন্যায় অনেক জায়গার শাকসবজি নষ্ট হয়েছে।
কোথাও কোথাও ধানও নষ্ট হয়েছে। এ কারণে পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কম। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্র্যোগের ওপর আমাদের কারও হাত নেই।
তবে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। টিসিবিসহ সরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে। এছাড়াও শীত মৌসুম আসছে। এ সময় নতুন ফসল ও সবজি আসবে। এতে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ৭-১০ দিনের মধ্যে আলুর দাম কমে আসবে। আর পেঁয়াজ আমদানি করে কেজিতে ৫০-৫৫ টাকার মধ্যে আনতে পারব। তিনি জানান, দাম নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পথ হল যথেষ্ট পরিমাণ পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন ঠিক রাখা।
আর সঙ্গে বাজার মনিটর করা। যতদূর পারছি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে তদারকির চেষ্টা করছি।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬-৫৮ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৪ টাকা।
বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৬-৪৭ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০-৪২ টাকা।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে অসাধুদের কারসাজির কারণে প্রতিনিয়ত ভোক্তারা ঠকছেন।
কিন্তু যে বা যারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছেন তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না। নামমাত্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জরিমানা করলেও বড়রা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
যে কারণে বাজারে চলমান অস্থিরতা দূর করতে সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। শুধু জরিমানা বা অভিযান চালিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
সরকারের একাধিক বাজার তদারকি সংস্থার সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে অসাধুদের চিহ্নিত করে জরিমানার পাশাপাশি জেলও দিতে হবে। তাহলেই বাজারে একটি শৃঙ্খলা আসবে। ভোক্তারা সুফল পাবে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মসুর ডাল বড় দানা বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ৯৮ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯২ টাকা।
আর দুই মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা, যা দেড় মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টকা।
আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা দেড় মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
এটি স্বাভাবিক নয়। তার মতে, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে একজন আরেকজনের দোষ দেয়। তবে বিষয়টি নজরদারির দায়িত্ব সরকারের। তিনি আরও বলেন, কোনো রকম কারসাজি হলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে শুক্রবার একাধিক সবজি ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে। এ দিন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা।
প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকা, শিম ১১০-১২০ টাকা, বরবটি ৮০-৯০ টাকা, বেগুন ৮০-১১০ টাকা, উচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা এবং প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকা।
চট্টগ্রামে সবজির দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী। বৈরী আবহওয়ার কারণে সবজির দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। নগরীতে বেশির ভাগ সবজির দামই কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেশি।
এদিকে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সামুদ্রিক মাছের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে মাংসের দাম কিছুটা স্থিতিশীল। নগরীর চেয়ে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে আরও চড়া দামে আলু বিক্রি হচ্ছে।
নগরীতে কাঁচাবাজারগুলোতে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়। উপজেলার কাঁচাবাজারগুলোতে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা।
সরকার মঙ্গলবার হিমাগার পর্যায়ে ২৭ টাকা, পাইকারিতে ৩০ টাকা এবং খুচরা ৩৫ টাকা কেজি আলু বিক্রির জন্য দাম বেঁধে দেয়। তবে এই দামে কেউ আলু বিক্রি করছে না।
চেয়ারম্যান : অ্যাডভোকেট আফছার হোসেন
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা
প্রধান কার্যলয় :
জহির বিল্ডিং (২য় তলা) বেগম টেড্রার্স এর পার্শে,
মাটিরাঙ্গা বাজার, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।